সর্বশেষ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান সংকট কাটাতে 'আপাতত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং'

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান সংকট কাটাতে সাশ্রয়ের পথে হাঁটছে সরকার। সেই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের শিডিউল লোডশেডিং শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে আপাতত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। খরচ কমাতে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সপ্তাহে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ এবং অফিসের সময়সূচি কমিয়ে আনার বিষয়টিও ভাবছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অফিস-আদালত ও উপাসনালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাত ৮টার পর দোকানপাট, বিপণিবিতান খোলা রাখলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার।'

'বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্নিষ্ট খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এসব সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়।'

-তবে সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সরকারের এসব পদক্ষেপে খরচ সাশ্রয় নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে লোডশেডিং করলে ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জেনারেটরে ব্যবহার বাড়বে। ফলে এ খাতে ডিজেল বেশি ব্যবহূত হবে। এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখলে ব্যবহার কমবে না, উল্টো পাম্পে তেল নিতে ভিড় বাড়বে। বিশ্নেষকরা বলছেন, মসজিদে শুধু নামাজের সময়ই এসি চলে। এসির বেশি ব্যবহার অফিসগুলোতে। অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা এসি, পাখা ও বাতি ব্যবহারে সচেতন নন। সরকারি ভবনগুলো বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ী নয়। দিনেও বাতি জ্বালাতে হয়। তাই বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের অধিকাংশ পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত নয় বলে তাঁরা মনে করেন।
 
-করোনা-পরবর্তী চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এলএনজি, জ্বালানি তেল সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের দাম। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়ছে রিজার্ভে। খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় হার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার সঞ্চিতিতে ঘাটতি তৈরি হলে সামনে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে, যার নজির দেখা যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায়।

'প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পরিবহন খাতে ৯০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ৩৪ শতাংশ তেল। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০০ ডলার। সরবরাহ করা গ্যাসের ২৫ শতাংশ আমদানি করা হয়। স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ৪০ ডলারে পৌঁছেছে। তাই বাংলাদেশ খোলাবাজার থেকে কিনছে না এলএনজি। এতে দিনে কমেছে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ। ফলে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ প্রেক্ষাপটে দেশে আবার ফিরেছে লোডশেডিং।'

-শিডিউল লোডশেডিং :গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে আলাদা এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে প্রতিদিন সূচি ধরে এক ঘণ্টা করে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হবে। এক সপ্তাহ পর অবস্থা দেখে লোডশেডিং দুই ঘণ্টা করা হতে পারে। তিনি বলেন, শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

'ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী ডিপিডিসি ও ডেসকোর ওয়েবসাইটে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সূচি দেওয়া হয়েছে। ডেসকো চাহিদার প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট কোম্পানিটি ৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করবে। ডিপিডিসির চাহিদা সাড়ে ১৬শ মেগাওয়াট, কোম্পানিটি ১১০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করবে। পিডিবি কাল বুধবারের মধ্যে শিডিউল দেবে। সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলো তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি লোডশেডিংসংক্রান্ত মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করবে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ওজোপাডিকো এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা নেসকো ওয়েবসাইটে লোডশেডিংয়ের সূচি প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।'

-রাত ৮ টায় দোকান বন্ধ না করলে কাটা পড়বে বিদ্যুৎ লাইন :সরকারের ঘোষণা অনুসারে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, তারা ব্যবসায়ীদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। আজ থেকেই দোকানপাট ও বিপণিবিতান রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হবে।

-অফিস সময় কমানোর চিন্তা :বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অফিসের সময় কমানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অফিস সময় কমিয়ে হতে পারে অথবা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করা হতে পারে। অথবা এ দুটিই হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সূত্র জানিয়েছে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ হতে পারে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সভা করোনার সময়ের মতো ভার্চুয়াল করার বিষয়েও ঘোষণা আসতে পারে। বুধবারের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

'সপ্তাহে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকতে পারে :বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সপ্তাহে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধের বিষয়ে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। পাম্প মালিকরা সোম, মঙ্গল কিংবা বুধবার বন্ধ রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।'

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান সংকট কাটাতে 'আপাতত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং'

-এদিকে সরকারের এসব পদক্ষেপে খুব বেশি লাভ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ২৪খবরবিডিকে বলেন, লোডশেডিংয়ে শিল্প খাতের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে কলকারখানা নির্দিষ্ট এলাকায় গড়ে ওঠেনি। ফলে চাইলেও কলকারখানাকে অগ্রাধিকার দেওয়া সেভাবে সম্ভব হবে না।

'বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে আপাতত জ্বালানি খরচের রাশ টানা যাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকারি অফিসে কর্মকর্তারা স্যুট-টাই পরে অফিস করেন। এসি ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে রাখেন। তাঁরা একাধিক গাড়ি ব্যহার করেন। সাশ্রয় করতে হলে এসব খাতে লাগাম টানা উচিত। কর্মকর্তাদের কক্ষে এসি বন্ধ রাখতে হবে। তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ছেড়ে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। অফিসগুলোতে অযথা বাতি জ্বালানো বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তাহলেই খরচ কমবে।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত